সোমবার, ১৫ অগাস্ট ২০২২, ১২:১৭ অপরাহ্ন
প্রতিবিম্ব
প্রিয়া গাঙ্গুলি
এই পড়ন্ত চল্লিশে
হঠাৎ তোমার জন্য আজ
এতো মন উথালপাতাল কেন?
মনে পরে সেই চল্লিশ বছর আগে
ঘোষ বাড়িতে আমার প্রবেশ।
নতুন সাজানো সংসারে
তখন আমি পুর্ন যৌবনা।
তুমি থাকতে ঠিক আমার মুখোমুখি।
রোজ তোমার মধ্যে দেখতাম
নিজের প্রতিবিম্ব।
প্রতিদিন নিজেকে নতুন করে খুঁজে পেতাম
তোমার মধ্যে দিয়ে।
কত গোপন চিঠি, সৌখিন শাড়ি ,
গহনা, আতড়ে ভড়ে থাকতাম আমি।
ওগুলো নিজের গায়ে জড়িয়ে রোজ নিজেকে দেখতাম তোমার চোখ দিয়ে।
কার্নিসে তখন পড়ন্ত বিকেল।
বার্নিশের গন্ধে বসন্ত সেদিন ভরপুর আমার শরীরে।
নতুন রূপে ধরা দেবো তোমার কাছে।
কিন্তু সেদিন তোমার …..
নিথর নিস্ফলক হয়ে
তাকিয়ে রইলাম আমি।
তুমি চলে গেলে ।
কিছু মানুষ এসে তোমার
টুকরো হৃদয়গুলোকে
সযত্নে তুলে নিয়ে গেল,
যেন সেই হৃদয় টুকরো
কারোর রক্তক্ষরনের কারণ না হয়।
সেই শেষ বারের মতো নিজেকে দেখেছিলাম তোমার ভাঙা প্রতিবিম্বে।
সময়ের পালা বদল ঘটল।
গা দিয়ে সেই বর্ণিশের গন্ধও
উবে গেলো।
রঙিন শাড়ি, সিন্দুরের কৌট,
আতর মাখানো প্রেমের চিঠিগুলো
এখন ধুসর ধুলায় পরিপূর্ণ।
না, এখন আমি আর
ঐ বাড়িতে থাকি না।
সাদা থানে মুড়ে নিজেকে ধরা দিয়েছিলাম এক বাবুর আবাসনে।
কিন্তু চামড়ায় পড়ন্ত যৌবন
এখন ক্লান্তির অবগুন্ঠনে আড়াল হয়ে গেছে।
প্রতিবিম্বে আর নিজেকে দেখি কই।
হাত বদল হতে হতে আজ এসে পৌচেছি
এক আবগারির দোকানে।
সারাদিন রঙিন দুনিয়ার ঝাঁঝালো গন্ধে
আচ্ছন্ন আমার শরীর।
এ দেশে কত নেশারু
মানুষ আছে __!
ঘরের এককোনে দাঁড়িয়ে
চুপ করে তাই দেখি। !
আরও কত কিছুই না দেখি।
দোকান মালিককে কানে পেন গুঁজে
হিসাব করতে দেখি,
টাকার বান্ডিল দেখি,
প্রশাসনের হম্বিতম্বি দেখি।
দেখি না কেবল নিজেকেই।
কতদিন দেখিনি নিজেকে
কারোর প্রতিবিম্বে।
সেদিন হঠাৎ রাস্তার ওপারে
দাড়িয়ে থাকা একটি ম্যাটাডোরে
এক টুকরো রোদ মাখানো দুপুরে,
নিজের প্রতিবিম্বে দেখতে পেলাম নিজেকে।
দেখলাম শরীরে বার্ধক্য জুড়ে শুধু পরে রয়েছে অবহেলা আর দুঃখের কাটাকুটির অসংখ্য দাগ।
ঠিক তখনই উই খাওয়া অথর্ব পা দুটো
দুমড়ে মুচড়ে গেলো।
হাতটা ভেঙে পড়লো মাটিতে।
হঠাৎ ঝ্ন্ ঝন্ শব্দ।
সমাপ্ত কাহিনীর
যবনিকা ভেদ করে দেখলাম __
কানে পেন গোঁজা দোকানি
চশমাটি কপালে তুলে
ভেঙে যাওয়া নেশার বোতলগুলোকে, আমার
ভিতর থেকে টেনে বার করার চেষ্টা করছে।
মৃত্যুতেও যে এতো নেশা
তা আগে বুঝিনি।
জীবনের মুক্তি যেন
এই ভাঙা কাঁচ গুলোর মধ্যে।
Leave a Reply