সোমবার, ২৭ Jun ২০২২, ০১:৩৫ অপরাহ্ন
আমার বাবা
কাজী লীনা আরাফাত
বিশ্ববাবা দিবস, বিভিন্ন পত্রিকা এবং ফেসবুকের পেজগুলোতে শুধুই বাবাকে নিয়ে লেখা, স্মৃতিচারণ, শুভেচ্ছাবানী খুব ভালো লাগছে দেখতে আর আমার বুকটার ভিতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, আমার বাবা ছিলো আমার ছায়ার মতোন আজ আমি ছায়াবিহীন….।
জানো বাবা এখন সন্ধ্যায় আমি আর তাড়াতাড়ি সন্ধ্যার কাজগুলো শেষ করি না, আমার কোন তাড়া নেই……কোন অদ্ভুত এক অদৃশ্য টান নেই…..৮ টা বেজে যাচ্ছে তোমাকে আর ফোন করা হয় না,, এখন আমি আর বলিনা আব্বা কেমন আছো তুমি, ঔষধ খেয়েছো, হাত দিয়ে ফোনটা ধরতে কষ্ট হচ্ছে…. আচ্ছা শুয়ে থাকো আর কথা বলতে হবে না, রানাকে আর ম্যাসেজ লিখি না, বাসায় ফিরে আব্বার সাথে কথা বলায়ে দিস।
আমার বিয়ের পর থেকে অনেক শহরে আমরা থেকেছি সাথে আমার আব্বাও, আমার দুই মেয়ের মাঝখানে সবসময় আমার আব্বা ঘুমাতো ওরা ওদের নানা ভাইয়ের কাছে গল্প শুনতেশুনতে ঘুমাতো, সে কতো রকমের গল্প! কখনো বেজি সাইকেল চালাতো আর বাঘ সাইকেলে বসে থাকতো….., আবার সত্যিকারের কাহিনি মুক্তি যুদ্ধের, যেখানে শহীদ হয় আমার আপন ফুপা এবং ফুপাতো ভাই সহ তাদের পরিবারের ১৮ জন, আবার আমার দাদা ছিলেন হেডমাস্টার তার চোখ ফাঁকি দিয়ে কোলবালিশ কাঁথা দিয়ে ঢেকে আব্বা এবং চাচারা লাইলি -মজনুর যাত্রা পালা দেখার গল্প এবং আমার দাদার হাতে ধরা পড়ার পরে কিযে হতো আমার বাবা,চাচাদের করুন অবস্হা….. তাদেরকে আবার তাদের দাদী মানে আমার বড় মা এবং আমার মেয়েদের পরদাদী বিরত্বের সাথে আমার দাদার হাত থেকে রক্ষা করতেন…… আমার মেয়ে দুটোর সৌভাগ্য ওরা তাদের নানা ভাইয়ের যে আদর পেয়েছে খুব কম বাচ্চারা সেটা পায়।
আমার বাবা ছিলেন চলমান ডিকশোনারি, তার নাতিরা পড়ার সময় সব ওয়ার্ডের অর্থ বলে দিতো, যতক্ষণ ওরা পড়তো পাশে বসে থাকতো, একসাথে বসে গল্প করতো, ওরা তাদের সত্যিকারের বন্ধু হারিয়ে ফেলেছে আর আমি আমার মাথার উপর থেকে সুশীতল ছায়া।
২০১৮ সালের শেষ দিকে আব্বা হঠাৎ অসুস্থ, আই সি ইউ তে, ঢাকাতে……… আর ২০২২ এ পহেলা মে আমাদেরকে এতিম করে দিয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে আমার আব্বা কিন্তু এমন একটা দিনও নেই আমাদের আব্বাকে মনে পড়ে না, সবকিছুতে আব্বার কথা, আব্বার স্মৃতি, এখন শুধু আমি আর কাউকে বলি না………আব্বা তুমি কবে আসবা……….?
Leave a Reply