শনিবার, ২৫ Jun ২০২২, ০২:৩৮ অপরাহ্ন
জয় বাংলা নিউজ প্রতিবেদক:
সিলেট নগরীর পানি কমলেও বন্যা নতুন মোড় নিয়েছে। সুরমার পানি কমছে, অন্যদিকে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ ভেঙে পানি হুহু করে ঢুকছে। এতে করে বিশ্বনাথ , ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জের কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এছাড়াও, সিলেটের জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, গোয়াইনঘাট, কোম্পানিগঞ্জ, বিশ্বনাথ ও ফেঞ্চুগঞ্জ এ ৬টি উপজেলার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। বন্যাদুর্গত এলাকায় খাবারের পাশাপাশি রয়েছে বিশুদ্ধ পানির তীব্র সংকট। অনাহারে, অর্ধাহারে রয়েছে বানভাসি মানুষ।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য মতে, সিলেটে নতুন করে কুশিয়ারা নদীতে পানি বেড়েছে। কুশিয়ারা নদীর ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় পানি ইতিমধ্যে ডেঞ্জার জোন অতিক্রম করেছে। এছাড়া কানাইঘাটে সুরমা, জকিগঞ্জে অমলসীদ, বিয়ানীবাজারে শ্যাওলা ও সিলেটের সুরমার পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী কেএম নিলয় পাশা বলেন, বিভিন্ন স্থানে কুশিয়ারা নদীর বাঁধ উপচে পানি ঢুকছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। অমলসীদে বাঁধ কেটে দেয়ার কারণে পানি ঢুকছে। অন্তত ২০ গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
সিলেটের আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী বলেন, সিলেটে এবার বৃষ্টিপাত বেশি হয়েছে। এছাড়া উজানে বৃষ্টিপাত হওয়ার কারণে বন্যা দেখা দিয়েছে। আগামী দু’এক দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাত কমে যাবে’।
সিলেটের জকিগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলররা জানান, অনেক স্থানে কুশিয়ারার বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। এতে নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে।
এদিকে, সিলেট নগরে পানি কমছে। তবে এখনো নগরীর উপশহর, ঘাষিটুলা, বেতরবাজার, কানিশাইল, মাছিমপুর, বাণিজ্যিক এলাকা কালীঘাট, সুবহানীঘাট, যতরপুরসহ কয়েকটি স্থানে হাঁটু পরিমাণ পানি রয়েছে। কিছু স্থানে পানি নেমে যাওয়ায় বন্যার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র ফুটে উঠছে।
কালিঘাটের চাল ও পেঁয়াজ ব্যবসায়ীরা জানান, বন্যায় অন্তত তাদের ২০ কোটি টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে। গোটা কালিঘাটই ছিল পানি নিচে। এ কারণে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। বন্ধ থাকা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠে যাওয়ায় তারা মালামাল সরাতেও পারেননি।
সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আশ্রয়কেন্দ্রে যারা আছেন তাদের মধ্যে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। এছাড়া বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। বন্যায় যাতে স্বাস্থ্যের ক্ষতি না হয় সেজন্য পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট দেয়া হচ্ছে। বন্যার কারণে সিলেট নগরীর ৬ শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭৪টিতে আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে।
সিলেট-৩ আসনের সাংসদ হাবিবুর রহমান হাবিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার বন্যাদুর্গতদের পাশে রয়েছে। ত্রাণসহ বন্যাপরবর্তী ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হবে।’
সিলেটের সিভিল সার্জন ডা এস এম শাহারিয়ার বলেন, ইতোমধ্যে শতাধিক লোক ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার তথ্য আমরা পেয়েছি। চর্মরোগও বাড়ছে। পানিবাহিত রোগ যাতে ছড়িয়ে না পড়ে এ জন্য আমরা এরইমধ্যে ১৪০ টি মেডিকেল টিম গঠন করেছি। তারা বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার্তদের সেবায় কাজ করছে’।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মো মজিবর রহমান বলেন, শনিবার পর্যন্ত বন্যার্তদের মাঝে ৩২৫ মেট্রিক টন চাল, নগদ ১৫ লক্ষ টাকা ও সাড়ে ৫ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার বিতরণ করা হয়েছে। এখনও আমাদের কাছে পর্যাপ্ত ত্রাণ আছে। পর্যায়ক্রমে সবাইকে ত্রাণ দেয়া হবে’।
Leave a Reply