রবিবার, ২২ মে ২০২২, ০৫:২৯ অপরাহ্ন
জয় বাংলা নিউজ ডেস্ক:
অর্থনৈতিক সংকটে থাকা শ্রীলংকার মতো অবস্থায় বাংলাদেশও পড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংসদের বিরোধী দলীয় উপনেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। আজ বুধবার সংসদে সপ্তদশ অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এ আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
জি এম কাদের বলেন, আমরা গর্ব করি মাথাপিছু আয় বেড়েছে, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ভালো ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু শ্রীলংকার ঘটনাগুলো আমাদের উদ্বিগ্ন করছে। কারণ এদেরও একই ঘটনা। দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে অগ্রসরমান দেশ ছিল শ্রীলংকা। হঠাৎ করে অর্থনীতিতে ধ্বস নেমে গেল। দেশটির প্রধান দুটি খাত ছিল- পর্যটন আর কৃষি। করোনার কারণে পর্যটন গেল আর কৃষিতে ভুল সিদ্ধান্ত নিল। বড় ধরনের প্রডাকশন লস হল। বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ঋণ নিয়েছিল উন্নয়নের নামে। ঋণের ভারে বসে পড়েছে। শোধ করতে পারছে না। বাংলাদেশও তাদের সাহায্য করেছিল।
তিনি বলেন, আমাদের প্রধান তিনটি খাত- রেমিট্যান্স, পোশাক আর কৃষি। এখানে রিস্ক ফ্যাক্টর আছে। আবহাওয়া ভালো না থাকলে কৃষিতে সমস্যা হয়। মধ্য আয়ের দেশ হওয়ার কারণে অনেকে এখন শুল্ক সুবিধা নাও দিতে পারে। প্রবাসী আয় যেকোনো সময় যদি কমে যায়, তখন অর্থনীতি ধাক্কা খেতে পারে। যে ঋণ নিচ্ছি, সেটার ভার বইতে পারব কিনা তা নিয়ে সন্দেহ আছে।
জাপা চেয়ারম্যান বলেন, তিন লাখ কোটি টাকার ঋণ আমাদের ঘাড়ে আছে। এগুলো শোধ করতে হবে। ওই তিনটি খাত শক্ত পায়ে দাঁড়িয়ে আছে, সেটা থাকবে কিনা? রিজার্ভের ওপর চাপ পড়ছে। আমাদের অবস্থা শ্রীলংকার মতো হবে না, সেটা জোর দিয়ে বলা যায় না।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সমালোচনা করে জি এম কাদের বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি দেশময় একটা বড় ধরনের আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এটা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা দেখা যাচ্ছে। যখন এটা নিয়ে সংসদে আলাপ হয়, দেখা যায় সরকারের মন্ত্রীরা তা স্বীকার করতে চান না। পরবর্তী সময়ে স্বীকার করার সময় বলেন, কোনো অসুবিধা নেই। সবার আয় ইনকাম বেড়েছে। মানুষের ভোগান্তি হচ্ছে না। বাণিজ্যমন্ত্রী বললেন, বিদেশে জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে এখানেও বাড়বে। এটাতে করার কিছু নেই।
তিনি বলেন, গড় আয় বাড়লেও আয়ের বৈষম্য বাড়ছে। বেকারত্বের সংখ্যা বাড়ছে। মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষ ভালো নেই। বিবিএসের তথ্যমতে, গত এক দশকে মজুরি বেড়েছে ৮১ শতাংশ। জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে ৮৪ টাকা। সরকারি হিসাবে মজুরি বৃদ্ধির চেয়ে দাম বাড়ার হার বেশি। পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। মাথাপিছু আয় বেড়েছে, মানুষ ভালো আছে—এই কথাটা বলা হচ্ছে। দারিদ্র্যের হার ৪২ শতাংশ বেড়েছে। নিম্ন মজুরি আন্তর্জাতিক মানসীমার নিচে।
কাদের বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে ঠিক। এটা আংশিক সত্য। বেশিরভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস আমরা বিদেশ থেকে আনি না। সব জিনিসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে সম্পর্কিত নয়। সাধারণ মানুষের ধারণা, মধ্যস্বত্বভোগী ও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দাম বাড়ানো হচ্ছে। বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির কারণে মূল্য বাড়ছে। জনসাধারণ শঙ্কিত হচ্ছে, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে পণ্যের দাম আরো বাড়তে পারে। মানুষের নাভিশ্বাস। সরকারি সেবার দাম বাড়ানো হয়েছে। শোনা যাচ্ছে, আরো বাড়বে।
রাজধানীর যানজট প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা শহরের যানজট এমন অবস্থায় গেছে, অনেকে বলছে যেন নরকে বাস করছি। মানুষ নরক যন্ত্রণা ভোগ করছে। ঢাকার সড়ক যেন দিন দিন নিশ্চল হয়ে পড়ছে। আমরা উন্নয়ন চাই। কিন্তু উন্নয়ন প্রকল্প পরিকল্পিভাবে গ্রহণ ও সময়ে শেষ করা উচিত। বাংলাদেশের উন্নয়নের কারণে মানুষ ভোগান্তিতে পড়ছে। তেমনভাবে দেখার কেউ নেই। সব প্রকল্প এক সঙ্গে চলছে। মহাপরিকল্পনার আওতায় যানজট হতে পারে না।
তিনি বলেন, উন্নয়নের নামে রাজধানী ঢাকাকে কী নরকে পরিণত করছি? ভেবে দেখার সময় এসেছে। নির্মাণ সামগ্রীর দাম অনেক বেড়ে গেছে। হঠাৎ করে দাম বেড়ে যাওয়ায় ঠিকাদাররা সমস্যায় পড়েছে।
Leave a Reply