সোমবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৬:২৩ অপরাহ্ন
জয় ডেক্স: মাত্র ২৫ বছর বয়সেই তিনি ফুটবল ছেড়ে দেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ডালিয়া আক্তার। এরপর তিনি কিছুদিন হ্যান্ডবল খেলেছেন, আর এরপর শুরু করেন কোচিং। কিন্তু কেন তার এমন পরিণতি? জবাবে ডালিয়া বলেছেন, আমি ছাড়িনি, বাধ্য হয়েছি! খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে অল্প বয়সেই ফুটবল ছেড়ে কোচিং, রেফারিং বা অন্য ক্রীড়ায় যোগ দেয়া নারীদের তালিকা বেশ লম্বা।
ডালিয়া বলেন, `সর্বশেষ যখন অধিনায়কত্ব করি তখন ইন্দো-বাংলা গেমসে আমরা চ্যাম্পিয়ন হই। এর ঠিক পরেই সাফ গেমসের জন্য যে ৩৮ জনের দল ঘোষণা করা হয়, সেখানে আমাকে ডাকাই হয়নি!`
শুধু ডালিয়া নয়; আরও অনেক সম্ভাবনাময় তরুণী অল্প বয়সেই ঝরে পড়েছেন। নিচের তালিকার দিকে একটু খেয়াল করুন :
অম্রাচিং মারমা : সাফ ফুটবলে গোল করেছেন এই তারকা। ফুটবল ছেড়েছেন মাত্র ২৩ বছর বয়সে।
সাবিনা খাতুন : জাতীয় দলের নিয়মিত ফুটবলার। তাকে বলা হয় `নারী ফুটবলের সাকিব আল হাসান`। তবে জাতীয় দলের খেলা না থাকায় তিনি বাংলাদেশের বয়স-ভিত্তিক দলগুলোর সাথে সহকারী কোচ হিসেবে কাজ করেছেন। তবে তাকে নতুনভাবে খেলোয়াড় হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে তাগাদা দিয়েছে বাফুফে।
জয়া চাকমা : ২৮ বছর বয়সের এই সাবেক নারী ফুটবলার বাংলাদেশ ও দেশের বাইরে রেফারির দায়িত্ব পালন করছেন। কিন্তু তিনি ফুটবল ছেড়েছেন ২০১২ সালে, অর্থাৎ মাত্র ২২ বছর বয়সে।
বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের ঝড়ে পড়ার তালিকা এমন লম্বা কেন? ডালিয়া আক্তারের সাথে কথা বলে এর কিছু কারণ খুঁজে পাওয়া যায়। তিনি জানান, বিগত ১০ বছরে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন শুধুমাত্র বয়স-ভিত্তিক ফুটবল দল নিয়ে কাজ করেছে। নারীদের লিগ হওয়ার কথা থাকলেও তার কোনো ধারাবাহিকতা নেই।
তিনি বলেন, একজন ফুটবলার যখন দেখেন কোনো লিগ নেই, কোনো আয়োজন নেই, তখন তিনি বিকল্প দেখতে বাধ্য হন। ডালিয়ার প্রশ্ন, `খেলোয়াড়রা খেলা ছাড়ে না। তবে একটা ফুটবলার নিজেকে কতদিন কোনো লক্ষ্য ছাড়া উজ্জীবিত রাখবে?`
এই পরিস্থিতিতে ক্লাবগুলোও এখন আগ্রহ হারাচ্ছে। ডালিয়া আক্তার বলেন, যেহেতু খেলা নেই তাই ফুটবলারদের বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হয় – যেটা শেষ পর্যন্ত ক্লাবগুলোর জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তার ভাষায়, `আমার কাছে মনে হয়, সবকিছু বন্ধ করে দিয়ে শুধু বয়স-ভিত্তিক খেলা চালিয়ে যাওয়াটা অবান্তর। শুধু অনূর্ধ্ব-১৪ আর অনূর্ধ্ব-১৬তে সর্বোচ্চ ৪০ জন ফুটবলার রয়েছে, কিন্তু একটা দেশে ন্যুনতম চার হাজার থেকে ছয় হাজার ফুটবলার প্রয়োজন।`
ডালিয়া আক্তার মনে করেন, গ্রাম থেকে আসা একটা মেয়ের জন্য ১৮ বছর বয়স হওয়ার পর কোনো পেশাদার মঞ্চ ছাড়া ফুটবল চালিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে যায়। যার কারণে অনেক অভিভাবক ফুটবলারদের খেলা থেকে নিয়ে যায়, বলছেন তিনি।
মেয়েদের এভাবে হারিয়ে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের নারী উইংয়ের প্রধান মাহফুজা আক্তার কিরণ বলেন, `আমাদের এই মুহূর্তে সিনিয়র দল নেই, এরাই সিনিয়র দল হবে। এখানে কিন্তু দুই বছর আগের ফুটবলাররা নেই, তারা এখন অনুর্ধ্ব ১৯ দলে আছেন। তবে বয়সভিত্তিক আমাদের পুরুষ দলেও কোনো বেতনের ব্যবস্থা নেই, কিন্তু নারী দলের জন্য আমরা বেতন দিচ্ছি।`
তবে এর আগেও তো ফুটবলার ছিলেন যারা খুব অল্প বয়সে খেলা ছেড়েছেন, তার কারণ কী? এমন এক প্রশ্নে মাহফুজা আক্তার কিরণ জানান, `আমরা এই দলটিকে যে লেভেলে ট্রেনিং করাচ্ছি, আমরা এর আগে আর্থিক কারণে এইভাবে নিয়মিত ট্রেনিং করাতে পারিনি।` এছাড়া তিনি বিয়ের ব্যাপারটি সামনে এনে বলেন, `অনেক ফুটবলার বিয়ে করে আর ফুটবল চালিয়ে যেতে পারেন না। যেহেতু আমরা বাঙালি, বিয়ে-শাদীর ব্যাপারটা চলে আসে।`
দেশের নারী ফুটবল যতটা এগিয়েছে, তার পেছনে বড় অবদান কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের। বাংলাদেশের বয়সভিত্তিক নারী দলগুলো তার অধীনেই খেলছে। বাফুফের এই কর্মকর্তা বলেন, এখন কোচদের অধীনে ক্যাম্পে প্রতিদিন ন্যুনতম তিন থেকে চার বেলা অনুশীলন করানো হয় যেটার সাথে আগের ফুটবলাররা মানিয়ে নিতে পারে না।
ছোটনের ভাষায়, `এখন যেমন ট্রেনিং হয় দিনে চার বেলা, এমন অনুশীলন আসলে আগের ফুটবলাররা করতে পারেন না, এই কষ্ট সবাই নিতে পারে না। তাদের আমরা ডেকেছিলাম, কিন্তু তারা চালিয়ে যেতে পারেনি।
সুত্র:সকালের সময়
Leave a Reply