মঙ্গলবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৪:২৯ পূর্বাহ্ন
জয় ডেক্স: গত ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ চকবাজারের চুড়িহাট্টয় ভয়াবহ অগ্নিকান্ডে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তার দায় এড়ানোর খেলা চলছে উল্লেখ করে এই অপরিমেয় ক্ষতির দায়ে দায়ী কারখানার মালিক এবং বাড়ির মালিককে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়ার দাবী জানিয়েছে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)।
গতকাল রোববার সকালে সংগঠনটির কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে আগুনের কারণ নিয়ে ১৬ দফা সুপারিশ তুলে ধরেন তারা। এসময় তারা অভিযোগ করেন, চকবাজারে আগুন লাগার মূল কারণ আড়াল করতে একটি স্বার্থান্বেষী মহল কাজ করছে। পবা এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল সোসাইটির প্রতিনিধিদল ২১ এবং ২২ ফেব্রুয়ারি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে। পরিদর্শনের প্রেক্ষিতে সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা বলেন, এলাকার বিভিন্ন মানুষজনের সাথে আলোচনাকালে ব্যবসায়ীদের অনেকেই রাসায়নিক এবং দাহ্য নানা ধরনের উপকরণের গোডাউন অগ্নিকান্ডের কারণ বলে মানতে নারাজ। অথচ এটা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে যে অগ্নিকান্ডের মূল কারণ বিপজ্জনক কারখানা এবং সেইসাথে বিভিন্ন কেমিক্যালের দোকান ও গোড়াউন।
পবার ১৬ দফা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, চকবাজারের অগ্নিকান্ডে চিকিৎসারতদের সর্বোচ্চ চিকিৎসা সহায়তা প্রদান, নিহত পরিবারকে সবধরণের পর্যাপ্ত সহায়তা প্রদান, এ ঘটনার জন্য দায়ীদের নিকট হতে ক্ষতিপুরণ আদায় করা, আইন লঙ্ঘন করে রাসায়নিক কারখানা এবং অন্যান্য দাহ্য উপকরনের গোডাউন স্থাপন এবং ভাড়া প্রদানকারী বাড়ীর মালিক ও ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা, বিপদজনক কারখানা ও গোডাউন আগামী ১ মাসের মধ্যে সরকারের তত্বাবধানে অস্থায়ী শেড করে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর, রাসায়নিক বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করা, লোকলয়ে রাসায়নিক দ্রব্যাদির গুদামজাত করণ, বিপনন ও উৎপাদন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নিমতলীর দুর্ঘটনার পর তালিকা করে ৮০০ রাসায়নিক গুদাম ও কারখানা পুরান ঢাকা থেকে কেরাণীগঞ্জে সরিয়ে নেওয়ার এবং কেরানীগঞ্জে ‘কেমিক্যাল পল্লী’ গড়ার উদ্যোগ গ্রহণের কথা ছিল।
কিন্তু তার কোন অগ্রগতি হয়নি। ২০১৭ সালে ফায়ার সার্ভিস এক জরিপের মাধ্যমে ৪০০ বাড়িতে রাসায়নিক কারখানা শনাক্ত করে এবং এ তালিকা সিটি কর্পোরেশনকে প্রদান করে। কিন্তু এই দীর্ঘসময়ে সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ হতে এ সকল কারখানা ও গুদাম সরাতে বা বন্ধ করতে কোন ধরনের ফলপ্রসু উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। পুরানা ঢাকার অধিকাংশ বাড়িতে ছোট বড় বিভিন্ন কারখানা রয়েছে। কোন কোন বা বাড়িতে ২-৩টি গুড়াউন বা কারখানা রয়েছে। তাতে সাধারণভাবে ধারণা করা যায় যে ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২০/৩০ হাজার কারখানা রয়েছে পুরান ঢাকায়।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, যে কোন ব্যবসার জন্য সিটি কর্পোরেশনের লাইন্সেস নিতে হয়, রাসায়নিক আমদানী ও মজুতের ক্ষেত্রে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন, কারখানা স্থাপনে ফায়ার সার্ভিস এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন প্রয়োজন। এছাড়া কারাখানা পরিদর্শন অধিদপ্তর শ্রমিকদের নিরাপত্তা এবং মান নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে আছে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর আইন ও নীতিমালা বাস্তবায়নে জনবল ও বাজেটে কোন ঘাটতি আছে রয়েছে কি না, সংস্থাগুলোর বিগত দিনে দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দায়িত্বে অবহেলা বা অসহযোগিতা করেছে কি না অথবা ব্যবসায়ীরা সরকারী সংস্থাগুলোর ক্ষমতাকে অবজ্ঞা করছে কি না, তাও খুজে দেখা জরুরি।
পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল সোসাইটির সাবেক সভাপতি ইউজিসি প্রফেসর মুহিবুর রহমান, পবার সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো: আবদুস সোবহান, পবার সম্পাদক ফেরদৌস আহমেদ উজ্জল, নির্বাহী সদস্য মো: সেলিম, বিসিএইচআরডির নির্বাহী পরিচালক মো: মাহবুল হক প্রমুখ।
সুত্র: সকালের সময়
Leave a Reply