শুক্রবার, ০২ Jun ২০২৩, ০৮:৫০ পূর্বাহ্ন
জয় ডেক্স: বাংলা একাডেমির চত্বরে ৫৪ নং স্টলটি একটু ব্যাতিক্রমধর্মী।কারণ এই স্টলে নেই কোন বিক্রয়কর্মী। বই পড়লে নাকি মানুষের মন উদার হয়, মানুষের নৈতিকভিত্তি শক্ত হয়। যারা বই পড়েন, তাদের মন মানসিকতা অন্যদের চেয়ে উন্নততর হয়। আর বইপ্রেমীদের সবচেয়ে বড় মিলনমেলা, উৎসবের স্থল তো আমাদের ঐতিহ্যবাহী বইমেলা। পাঠকরা স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে নিজেরা বই দেখবেন, পছন্দ করবেন, মূল্য হিসেব করে সেটা পরিশোধ করে চলে যাবেন। মানুষের মধ্যকার সততা, নৈতিকতার ভিত্তিকে মজবুত করতেই এই ধরণের উদ্যোগ।
আমরা অনেকে এই ধরণের উদ্যোগের নাম শুনেছি। দেশের বিভিন্ন জায়গায়, বিশেষত স্কুলে সততা স্টোর নামক কিছু দোকানের খবর হয়ত কারো অজানা নয়। এসব দোকানে কোনো বিক্রেতা থাকে না। ক্রেতারা নিজেরা সৎ থাকেন, সততার পরীক্ষা দিয়ে তারা দ্রব্য কিনে মূল্য পরিশোধ করেন নিজেদের মতো। বইমেলায় এধরণের উদ্যোগ অবশ্য এবারই প্রথম। বিদ্যানন্দ প্রকাশনী নামক একটি প্রকাশনী এবারের বইমেলায় বিক্রেতাবিহীন এই স্টলটি দিয়েছে।
বিদ্যানন্দ প্রকাশনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, “৭০০ এর অধিক স্টল দিয়েছে দেশের নামীদামী প্রতিষ্ঠানগুলো। তাঁদের তুলনায় আমরা খুবই নগণ্য, হয়তো শেষদিকেই থাকবো বেচাবিক্রিতে। তবুও আমাদের সে ছোট স্টলটি আলোড়ন তৈরি করে নিয়েছে পুরো বাংলাদেশে। মানুষকে কিভাবে বিশ্বাস করতে হয়, কিভাবে অনুপ্রানিত করতে হয় সেটাই শিখতে দর্শনার্থীরা আছে আমাদের স্টলে।”
মানুষও আসলে বিশ্বাসের প্রতিদান দিচ্ছে। সততার পরীক্ষায় সকলেই উর্ত্তীণ। এই স্টলের সামনে গেলেই আসলে নজরে পড়ে অভিনব কিছু দৃশ্য। এই প্রসঙ্গে বিদ্যানন্দ প্রকাশনীর ফেসবুক পেজে বলা হয়, “এক হাজার টাকার জাল নোট নিয়ে নয়শ টাকার ভালো নোট নিয়ে হাঁটা ধরলেন এক ক্রেতা। এমনটা হবে ভয় পাচ্ছিলাম। না, একজনও সে অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে আসেননি, জাল নোট কিংবা বেশী খুচরা কেউ নেননি, উল্টা কেউ ছেড়ে দিলেন ভাংতি টাকাগুলো। কেউ কেউ অনেকটুকু হেঁটে খুঁজে খুঁজে স্টলে এসেছেন, অভিজ্ঞতা নিয়েছেন ভিন্ন স্বাদের কেনাকাটায়, বিশ্বাসের অনন্দটুকু।
বইমেলায় অনেকেই গিয়েছেন, অনেকেই যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন হয়ত সামনে। তারা অবশ্যই একবার ঢুঁ মারতে পারেন এই ব্যতিক্রমধর্মী বইয়ের স্টলটিতে। আমাদের দেশে মানুষের সততার কিছুটা অভাব তেমনি মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাসেরও অভাব। বিদ্যানন্দ প্রকাশনীর এই আয়োজন এই অভাবটা দূর করতে একটু হলেও ভূমিকা রাখবে। এই স্টলের মাধ্যমেই প্রমাণ হচ্ছে যে, মানুষকে বিশ্বাস করাটা খারাপ কিছু নয় এবং সব মানুষ অসৎ নয়। বরং, বেশিরভাগ মানুষই সৎ এবং ভাল কিছুকে তারা সুযোগ পেলে গ্রহণ করতে পারে।..সকালে সময়
Leave a Reply