শনিবার, ০৬ মার্চ ২০২১, ১১:৪১ পূর্বাহ্ন
ডিজিটাল যুগে প্রতিভা লুকিয়ে রাখার উপায় নেই। প্রযুক্তির কল্যাণের ছোঁয়া পেলেই যেকোনো উপায়ে প্রতিভা বিকশিত হবেই। যার উজ্জ্বল উদাহারণ ভারতের ভবঘুরে বৃদ্ধা রানু মণ্ডল। ভবঘুরে রানুর গানের প্রতিভা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন এক যুবক। আর তার গানের ভিডিও ভাইরাল হলে আলোড়ন সৃষ্টি হয়। তেমনি প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরেক ভারতীয় নারী বৃদ্ধ বয়সে ইউটিউবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। এরইমধ্যে ইউটিউবের গোল্ডেন বাটন ব্যাজ অর্জন করেছেন তিনি।
ইউটিউব সেলিব্রেটি বয়স্ক নারীর নাম গাঙ্গাভা মিলকুরি। তিন অন্য সবার থেকে আলাদা। চিরায়ত শহুরে গল্পের স্ক্রিপ্টের বাইরে থেকেই তার উত্থান। এ ইউটিউব সেলিব্রেটির বাড়ি ভারতের দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানার লাম্বাদিপল্লীতে। বয়স্ক এই বৃদ্ধাকে ইউটিউবে জনপ্রিয়তা এনে দিয়েছে ইউটিব চ্যানেল ‘মাই ভিলেজ শো’, যার সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা দেড় মিলিয়ন। আর দিন দিন তা দ্রুত বাড়ছে।
সংবাদ মাধ্যমের খবর, ২০১২ সালে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও গ্রামীণ জীবন ভিত্তিক ভিডিও তৈরি করে আপলোডের জন্য চ্যানেলটি চালু করেন বৃদ্ধা গাঙ্গাভার নাতি চলচ্চিত্র নির্মাতা শ্রীকান্ত শ্রীরাম। স্ক্রিপ্ট রাইটার, এডিটর, ক্যামেরাম্যানসহ তাদের টিমে রয়েছে ৯ জন।
গাঙ্গাভা মিলকুরি বলেন, ইউটিউব চ্যানেলটির যাত্রার সময় এ ব্যাপারে কোনো ধারণাই ছিল না। প্রথম দিকে আমার নাতি গ্রামের গাছ-গাছালি, ক্ষেতের ছবি তোলে ভিডিও বানাতো। আমি ভাবতাম, এই ছেলে এভাবে ভিডিও করে সময় নষ্ট করছে কেন? কিন্তু আমি কখন ভাবতেও পারিনি যে তার সেই ভিডিওয়ের অংশ হয়ে যাব।
২০১৭ সালে নাতি শ্রীকান্ত শ্রীরামের ভিডিওতে অতিথি শিল্পী হিসেবে কাজ শুরু করেন গাঙ্গাভা মিলকুরি।
শ্রীরাম দাদি সম্পর্কে বলেন, গাঙ্গাভা মিলকুরি ক্যামেরার সামনে খুবই স্বাভাবিকভাবে হাজির হতে পারেন। ফলে দ্রুতই তার ভক্তের সংখ্যা বেড়ে যায়। দাদির প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। এই গ্রাম্য পরিবেশই তাকে স্বাভাবিকভাবে অভিনয় করতে সহায়তা করেছে। গাঙ্গাভা বলেন, সবাই জানে আমি একজন বয়স্কা নারী ও কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা নেই। এতে মানুষ আমার কথা পছন্দ করে বলে মনে হয়।
সংবাদ মাধ্যমের আরো খবর, ইউটিউব তারকা খ্যাতি পাওয়ার আগে খুবই কষ্টে জীবন কাটিয়েছেন গাঙ্গাভা। প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করার আগেই স্কুল ছাড়তে হয়। খামারে কাজ করার পাশাপাশি সিগারেট বানিয়ে পরিবারকে সাহায্য করতেন তিনি।
পারিবারিক জীবন সম্পর্কে গাঙ্গাভা বলেন, স্বামী মাতাল থাকায় সব ধরণের কষ্টের কাজই আমাকে করতে হয়েছে। খুব কষ্ট করে দুই কন্যা ও এক ছেলেকে বড় করেছি আমি।
তবে ইউটিউব তারকার হওয়ার পর থেকেই বদলে গেছে গাঙ্গাভার জীবন। ভারতে গাঙ্গাভার ইউটিউব চ্যানেলের ব্যাপ্তি দিনদিন বহুগুণে ছড়িয়ে পড়ছে।
ইউটিউবের এশিয়ার মুখপাত্র তু এঙ্গুইন জানান, গাঙ্গাভার চ্যানেলের ভিডিওতে অনেক ধরণের ভাষার সংমিশ্রণ রয়েছে। ফলে চ্যানেলটির দর্শক সংখ্যা অনেক বেড়েছে। প্রতিমাসে অন্তত ২৬৫ মিলিয়নের বেশি মানুষ গাঙ্গাভার চ্যানেলের ভিডিও দেখে।
সাধারণত চ্যানেলটির ভিডিওগুলো তেলেগু ভাষায় বানানো হয়, যা গাঙ্গাভার মাতৃভাষা ও তেলেঙ্গানার দাফতরিক ভাষা। আর এজন্যই তু এঙ্গুইন চ্যানেলটির সফলতা প্রত্যাশা করেন।
তু এঙ্গুইন জানান, হিন্দি ও ইংরেজির ভাষার অনেক ইউটিউব চ্যানেল রয়েছে। এর মধ্যে আঞ্চলিক ভাষায় ভিডিও দেয়ায় এটি মানুষের আগ্রহ তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়াও চ্যানেলটি জনপ্রিয়তার দুটি কারণ রয়েছে বলে মনে করেন ইউটিউবের এশিয়ার এ মুখপাত্র। কারণগুলো হচ্ছে- চ্যানেলটির প্রধান চরিত্রে একজন নারী আর এটি একটি কৃষিকাজ নির্ভর ভিডিও তৈরির চ্যানেল।
এক মিলিয়ন অর্থ্যাৎ ১০ লাখ সাবস্ক্রাইবার হওয়ায় ২০১৯ সালে চ্যানেলটি ইউটিউব থেকে গোল্ডেন ব্যাজ অর্জন করে। এখনো পর্যন্ত চ্যানেলটির সবচেয়ে জনপ্রিয় ভিডিওটি হলো ‘ভিলেজ লো ড্রাংক আন্ড ড্রাইভ’। এ ভিডিও-এর ভিউ হয়েছে প্রায় ৩০ মিলিয়ন।
গাঙ্গাভা শুধু ইউটিউবেই জনপ্রিয় নন, তার জনপ্রিয়তার ব্যাপ্তি ইনস্টাগ্রামেও রয়েছে। ইনস্টাগ্রামে তার ফলোয়ার সংখ্যা প্রায় ৪১ হাজার। এছাড়াও সম্প্রতি তেলেগু ভাষায় নির্মিত ‘ইস্মার্ট শংকর’ ও ‘মালেশাম’ নামের দুটি চলচ্চিত্রেও অভিনয় করেছেন গাঙ্গাভা। কয়েক বছর আগে গাঙ্গাভা তার গ্রামের বাইরে যাননি। কিন্তু তিনি এখন দেশখ্যাত সোশ্যাল মিডিয়া সেলিব্রেটি। আর সেটি উপভোগ করছেন তিনি।
নিজের খ্যাতি উপভোগের বিষয়ে গাঙ্গাভা বলেন, ক্যামেরার সামনে অভিনয় করতে খুব ভালো লাগছে। আমার আরো ভালো লাগছে, যখন শুনি সারা ভারতের মানুষ আমার অভিনয় দেখছে। গ্রামে অনেক ভক্তরা এসে আমার সঙ্গে সেলফি তোলেন। আর সেই সেলফি তোলা আমারও ভালো লাগে।
ইউটিউব চ্যানেলটি গাঙ্গাভাকে অল্প অল্প করে সাবলম্বী করে তুলছে। তাই তার পরিকল্পনা সম্পর্কে বলেন, এরইমধ্যে চ্যানেল থেকে আয় করা অর্থ দিয়ে ঋণ পরিশোধ করেছি। ভবিষ্যতে একটি বাড়ি নির্মাণ করব। চ্যানেলের একটি আয়ের অংশ তার নাতি শ্রীরাম গ্রামের মানুষের মধ্যে ভাগ করে দেন। এরইমধ্যে তাদের প্রোডাকশন অফিসের পাশে একটি ছোট্ট লাইব্রেরিও করা হয়েছে।
গাঙ্গাভার নাতি শ্রীরাম সতর্ক করে সবার উদ্দেশ্যে বলেন, ইউটিউব প্রত্যেকের জীবনকে পরিবর্তন করছে। ইউটিউবকে ভালো উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলে প্রত্যেকেই স্টার হয়ে উঠতে পারবে। পাশাপাশি এর মাধ্যমে প্রাত্যহিক জীবনের সমস্যাগুলোও সমাধান করতে পারবে। আসল বিষয় হচ্ছে, প্রযুক্তি গ্রামের মানুষের জীবনও বদলে দিচ্ছে।
জয় বাংলা নিউজ/ডেবা
Leave a Reply