রবিবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১:৫৭ অপরাহ্ন
জয় ডেক্স: অবসরের পরও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা রেশন সুবিধা চান। আমৃত্যু পরিবারের অন্তত দু’জন সদস্য রেশন সুবিধার আওতায় থাকতে আগ্রহী। আর তা বাস্তবায়ন হলে সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর সঙ্গে মানানসই হবে বলে মনে করছেন পুলিশের নীতিনির্ধারকরা। বর্তমানে কর্মরত অবস্থায় পুলিশের যে কোনো সদস্য তার পরিবারের সর্বোচ্চ চার ব্যক্তির জন্য রেশন পেয়ে থাকেন। প্রতিবারের মতো এবারও পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বাহিনীর পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি-দাওয়ার বিষয় সামনে আসতে পারে। সেখানে রেশন সুবিধা চাওয়ার বিষয়টি উত্থাপিত হবে। সংশ্নিষ্ট একটি দায়িত্বশীল সূত্র থেকে গতকাল রোববার এ তথ্য পাওয়া গেছে।
এ ব্যাপারে সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক নুরুল হুদা বলেন, সরকারের সামর্থ্যে যদি কুলায়, তাহলে অবসরের পরও পুলিশ সদস্যদের রেশন সুবিধা দিতে পারে। অন্যান্য দেশের পুলিশ এ ধরনের সুবিধা পায় কি-না, তাও দেখা দরকার।
সোমবার শুরু হচ্ছে পুলিশ সপ্তাহ-২০১৯। রাজধানীর রাজারবাগ পুলিশ লাইন্সে এর উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনের পর পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে কল্যাণ প্যারেডে অংশগ্রহণ করবেন তিনি।
দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, এখন পুলিশের সদস্যরা রেশন হিসেবে পাঁচ ধরনের জিনিসপত্র পেয়ে থাকেন। তা হলো চাল, ডাল, তেল, আটা ও চিনি। স্বামী-স্ত্রী ও এক সন্তানসহ কারও পরিবারের তিন সদস্য হলে মাসে ৩০ কেজি চাল, ২০ কেজি আটা, পাঁচ কেজি ডাল, ছয় লিটার তেল ও চার কেজি চিনি পেয়ে থাকেন। কারও পরিবারের সদস্য স্বামী-স্ত্রীসহ চারজন হলে প্রতি মাসে ৩৫ কেজি চাল, ৩০ কেজি আটা, আট কেজি ডাল, আট লিটার তেল ও পাঁচ কেজি চিনি পেয়ে থাকেন। স্বামী-স্ত্রীসহ সর্বোচ্চ দুই সন্তানের জন্য রেশন সুবিধা দেওয়া হয়। কারও পরিবারের একজন সদস্য হলে এ হিসেবে রেশন পান।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সেনাবাহিনীতে অবসরকালীন রেশন সুবিধা নেই। তবে অবসরে যাওয়ার পর সেনাবাহিনীর সদস্যরা প্রতি মাসে ‘খাবার ভাতা’ পেয়ে থাকেন। স্বামী-স্ত্রী মিলে অবসরকালীন ভাতার পরিমাণ প্রায় এগারোশ’ টাকা। তবে কারও সন্তানের বয়স ১৮ বছরের নিচে হলে তিনিও সব পরিমাণ খাবার ভাতা পান। কিন্তু অবসরের পর অধিকাংশ সদস্যের সন্তানের বয়স আঠারোর কোঠা পেরিয়ে যায়।
রেশন ছাড়াও এবারের পুলিশ সপ্তাহে এ বাহিনীর সদস্যদের জন্য একটি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিষয়টি সামনে আসতে পারে। এ ছাড়া পুলিশের হাসপাতালে আইসিইউ সুবিধা ও জেলা পর্যায়ে বাহিনীর সদস্যদের জন্য চিকিৎসার মান বাড়ানোর বিষয়ে দাবি জানানো হবে। এমনকি পুলিশের কোনো সদস্য আহত হলে তার চিকিৎসার জন্য অ্যাম্বুলেন্স সুবিধার বিষয়টিও তুলে ধরা হবে।
পুলিশের বিভিন্ন পদমর্যাদার একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমানে কনস্টেবল থেকে এসআই পর্যন্ত ঝুঁকি-ভাতা দেওয়া হয়। তবে পুলিশের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, সব সদস্যের জন্য ঝুঁকি-ভাতা থাকলে ভালো। তাদের যুক্তি, অনেক সময় ঝুঁকিপূর্ণ অপারেশনে গিয়ে পুলিশ কর্মকর্তারাও প্রাণ হারিয়েছেন। বিশেষ জঙ্গিবিরোধী অপারেশনে পুলিশ বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন। ২০১৬ সালে গুলশানে হলি আর্টিসানে জঙ্গি হামলা প্রতিরোধ করতে গিয়ে পুলিশের দুই কর্মকর্তা নিহত হন। আহত হয়েছেন অর্ধশতাধিক। এ ছাড়া সিলেটে জঙ্গি হামলা মোকাবেলা করতে গিয়ে র্যাবের তৎকালীন গোয়েন্দা শাখার প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ ও একাধিক পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। এসব দুর্ঘটনা বিশ্নেষণ করে পুলিশের অনেকের ভাষ্য, কনস্টেবল থেকে সর্বোচ্চ পর্যায় সব পদমর্যাদার সদস্যের জন্য রেশন সুবিধা দেওয়া যৌক্তিক।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে বাহিনীর পক্ষ থেকে বেশ কিছু দাবি-দাওয়ার বিষয় আলোচনায় আসতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো পুলিশে আরও জনবল বাড়ানো। আগামী পাঁচ বছরে অন্তত এক লাখ জনবল বাড়াতে চায় পুলিশ। পুলিশ মহাপরিদর্শকের পদটি ‘চিফ অব পুলিশ’ করার প্রস্তাব আসতে পারে। এ ছাড়া আইজিপির পদটি ফোর স্টার জেনারেলের পদমর্যাদার বিষয়টি নিয়েও আলোচনা হতে পারে। এমনকি পুলিশ প্রশিক্ষণ ব্যবস্থাপনার মানোন্নয়নের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হবে। বঙ্গবন্ধুর নামে একটি পুলিশ একাডেমি, পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে আরও পদ সৃষ্টি করা, পুলিশের যানবাহন বাড়ানো, প্রশিক্ষণ ভাতা বৃদ্ধি, ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের পোশাকসামগ্রী সরকারিভাবে সরবরাহ করা, পুলিশের নামে বরাদ্দকৃত খাসজমি নামজারি, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ দূতাবাসে পুলিশ কর্মকর্তা অ্যাটাশে নিয়োগ, মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, দুদক, পাসপোর্ট অফিস, বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট কর্তৃপক্ষ, নির্যাতন ও হেফাজতে মৃত্যু (নিবারণ) আইনের সংশোধন, সন্ত্রাসবিরোধী আইনের দুটি ধারার সংশোধন এবং কারা অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ পদে পুলিশ কর্মকর্তাদের প্রেষণে দায়িত্ব পালনের সুযোগের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
নতুন সাজে রাজারবাগ :পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে নতুনভাবে সেজেছে রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে ব্যানার-ফেস্টুন টানানো হয়েছে। আজ সকাল ১০টায় প্রধানমন্ত্রী রাজারবাগ পুলিশ লাইন্স মাঠে বর্ণাঢ্য বার্ষিক পুলিশ প্যারেডের মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহের উদ্বোধন করবেন। তিনি সারাদেশের বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটের সদস্যদের সমন্বয়ে গঠিত ১১টি কন্টিনজেন্ট এবং পতাকাবাহী দলের নয়নাভিরাম প্যারেড পরিদর্শন ও অভিবাদন গ্রহণ করবেন। এবারের পুলিশ সপ্তাহের প্যারেড অধিনায়ক হিসেবে নেতৃত্ব দেবেন পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সের এআইজি আবিদা সুলতানা। তার নেতৃত্বে পরিচালিত প্যারেডে অংশ নেবেন সহস্রাধিক পুলিশ সদস্য। এবারের পুলিশ সপ্তাহের মূল প্রতিপাদ্য ‘পুলিশ জনতা ঐক্য গড়ি, মাদক-জঙ্গি নির্মূল করি’।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে ২০১৮ সালে পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের অসীম সাহসিকতা ও বীরত্বপূর্ণ কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ ৩৪৯ জনকে বিভিন্ন পদক দেওয়া হবে। তাদের মধ্যে ৪০ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)’, ৬২ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)’ এবং ১০৪ জন পুলিশ সদস্যকে ‘বাংলাদেশ পুলিশ পদক (বিপিএম)-সেবা’ এবং ১৪৩ জনকে ‘রাষ্ট্রপতির পুলিশ পদক (পিপিএম)-সেবা’ প্রদান করা হবে। চাকরিজীবনে যারা এ সম্মানে ভূষিত হন, তাদের বেতনের সঙ্গে প্রতি মাসে বিশেষ সম্মানী-ভাতা যুক্ত হয়।
পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি তার বাণীতে বলেন, ‘পুলিশ দেশের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা এবং জননিরাপত্তা বিধানে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। জঙ্গিবাদ দমন ও মাদক নির্মূলে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকা দেশ-বিদেশে প্রশংসিত হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী তার বাণীতে বলেন, জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ বিশ্বে ‘রোল মডেল’ হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দেশের সব প্রয়োজন ও সংকটকালে বাংলাদেশ পুলিশ জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা বিধানে নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে পুলিশ বাহিনীর সাফল্য ও গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকা বাংলাদেশকে বিশ্ব পরিমণ্ডলে অনন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে।
এ ছাড়া পুলিশ সপ্তাহ উপলক্ষে দেশবাসীকে খুদে বার্তা পাঠিয়ে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী।
পাঁচ দিনব্যাপী পুলিশ সপ্তাহের বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীদের সম্মেলন, আইজি’জ ব্যাজ, শিল্ড প্যারেড। আগামী শুক্রবার আইন-শৃঙ্খলা ও অপরাধ-সংক্রান্ত মতবিনিময় সভার মধ্য দিয়ে পুলিশ সপ্তাহের আয়োজন সমাপ্ত হবে। দৈনিক সমকাল
Leave a Reply