বৃহস্পতিবার, ৩০ মার্চ ২০২৩, ০১:২৬ পূর্বাহ্ন
ফারুক হোসেন: ইবাদ আলী একজন সফল কৃষিবিদ, গবেষক ও লেখক, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফুড ইনিঞ্জিয়ারিং বিষয়ে এম. এস .ডিগ্রী অর্জন করেন। ১৯৮০র দশকে তরুন এ গবেষকের জন্ম হয় শিল্পনগরী যশোর সদর উপজেলার ফতেপুর গ্রামের কৃষক বাবা নওয়াব আলী মোল্লা এবং গৃহিনী মা রিজিয়া খাতুনের পরিবারে। ৭ সন্তানের মধ্যে ইবাদ আলী চতুর্থ। গবেষক ইবাদের ই”ছা দেশের মানুষের জন্য ভালো কিছু করা। সেই ভাবনা থেকেই একের পর এক গবেষনা করে সফল হ”েছন তিনি। ইতোমধ্যে নানা পুরস্কারে ভুষিত হয়ে প্রসংশা কুড়িয়েছেন অনেক। কর্মজীবনে প্রবেশের পূর্বে তার নিজ জেলায় নানা সফলতার পাশাপাশি শুরু করেন কোমলমতি শিশুদের শিক্ষা নিয়ে ব্যতিক্রমধর্মী গবেষনা। সম্প্রতি তার গবেষনায় প্রকাশিত হয়েছে কোমলমতি শিশু শিক্ষা ও অভিভাবকদের করনীয় বিষয় নিয়ে তিনটি বই। ওই বইয়ের মাধ্যমে অধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারবেন শিশুরা। ইতোমধ্যে বই তিনটি ব্যাপক সাড়া ফেলেছে দেশ জুড়ে। ইবাদের দাবী সদ্য প্রকাশিত গবেষনাধর্মী ওই বই গুলোর দিকে যেন নজর পড়ে সরকার সহ সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের। বর্তমানে ইবাদ আলী ¯’ানীয় সরকার মন্ত্রনালয়ের অধীনে বাগেরহাট জেলার শরণখোলা উপজেলায় কর্মরত আছেন। সম্প্রতি প্রকাশিত বইটির মোড়ক উন্মোচন করেন শরণখোলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা লিংকন বিশ্বাস। পরে সাংবাদিকদের সাথে এক চায়ের আড্ডায় ইবাদ আলী বলেন, শিক্ষা মানুষের মৌলিক অধিকার, জাতি গঠনের উত্তম উপায়,মাথাতুলে দাঁড়াবার পরীক্ষিত পথ,জীবনকে সত্য ও সুন্দর পথে পরিচালনা করার মহাসড়ক। শিক্ষা মানুষকে অন্ধকার হতে আলোর পথে আনে, জরাজীর্ণ পুরাতনকে পিছনে ফেলে নতুনকে সামনে দিকে ধাবিত করে। শিক্ষা মানুষের অন্তর্নিহিত গুণাবলির পূর্ণ বিকাশ করে মানুষকে মানব সম্পদে পরিণত করে। একটি জাতির সভ্যতা ,উন্নতি,আচার- আচরণ,নেতৃত্ব ,শান্তি সমৃদ্ধি সবকিছু-ই নির্ভর করে একটি সুন্দর বিজ্ঞান ভিত্তিক আধুনিক শিক্ষা পদ্ধতির উপর। একটি গবেষণা ধর্মী ,বিজ্ঞান ভিত্তিক শিক্ষা ব্যাব¯’ায়-ই পারে জাতিকে সঠিক পথে পরিচালনা করতে, পারে উন্নতির শিখরে পৌছে দিতে। তাই শিশু শিক্ষা নিয়ে গবেষণার বিকল্প নেই। শিশুদের পাঠ্যবই কেমন হবে,কি কি বিষয় তাদেরকে শেখাতে হবে ,কেমন করে শেখাতে হবে -সে বিষয়গুলো নিয়ে গবেষণা করে তার বইটি প্রকাশ করা হয়েছে। বর্তমান সময় শিশুরা বিভিন্ন গেম, কার্টুন বেশি শিখছে। লেখা পড়া ও নীতি নৈতিকতা শিখছে কম। বেশির ভাগ ছাত্র/ছাত্রী শিক্ষকদের কথা শোনে না, পিতা-মাতাকে মান্য করে না, বড়দের সম্মান করে না, এ জন্য মূলত অভিভাবকরাই বেশি দায়ী। এতে তাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটছে না। নীতি বহির্ভুত শিক্ষার দিকে ছেড়ে দি”িছ। শিশুরা কি কি পছন্দ করে, কি কি করে না, কিভাবে পড়ালে সে আনন্দ পায়, তার শারীরিক, মানসিক ও ব্যক্তিত্বের বিকাশ হবে সেই বিষয়ে অভিভাবকদের আগে জানতে হবে। শিশু শিক্ষার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি প্রথমে মনে রাখতে হবে সেটি হল ভয়। শিশুর কোমল হৃদয়ে ভয়ার্ত চেহারা, আচার-আচারণ, ছবি, লাঠি, বেত, ইত্যাদি দ্বারা আঁচড় দেয়া যাবেনা। তাদেরকে ¯েœহ, মায়া, মমতা, আদর, ভালবাসা, করুনা, সহমর্মীতা, মানবিকতার মধ্যে শেখাতে হবে। বাংলা ভাষায় একটি শিশুর শিক্ষা জীবনের প্রথম বাক্য শুরু হয় ‘‘ অ” দ্বারা । আর তা যদি কোমল মতি শিশুদের শেখানে হয়, অ-তে ” অজগর টি আসছে তেড়ে অর্থাৎ জীবনের প্রথমে শিশুদের কে ভয় শেখানো হ”েছ। তাদের থেকে একটি জাতি সৃষ্টি হয়। একটি জাতি যদি ভয় দিয়ে জীবন শুরু করে, তাহলে দেশ ভালো ভাবে চলবে না। শিশুদের মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে বাঘের ভয় দেখিয়ে ঘুম পড়ানো চেষ্টা করেন। কিন্ত এভাবে ঘুম পড়ানো কখনো উচিৎ নয়। কারণ বাজারের অনেক বইতে আছে অ-তে”অজু করে নামাজ পড়ি” বাক্যটি মুসলিমদের জন্য অত্যন্ত ভাল ও পবিত্র কিন্ত হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান বা অন্যদের জন্য ঠিক নয়। এভাবে অ-তে অলি উড়ে ফুলে ফুলে,্ঋ-তে” ঋষি বসে ধ্যান করে” –মুসলিমরা কখনো চাইবে না যে তার শিশু এই পদ্ধতিতে ধ্যান করা শিখুক।, এভাবে প্রতিটি বাক্যের-ই সমালোচনা আছে। এভাবে শিশু শিক্ষা চলতে পারেনা। বই হবে সকল ধর্মের, সকল বর্ণের ,সকল শ্রেণীর মানুষের জন্য প্রযোজ্য। বই হবে বিজ্ঞান ভিত্তিক,আধুনিক,জীবন ঘনিষ্ট, নীতি কথামুলক। সেখানে কোন সমালোচনা থাকবে না। এখনো অনেক স্কুলে লাঠি , বেত ও কান মলার প্রচল রয়েছে যে কারণে
অনেক সময় স্যারের ভয়ার্ত চেহারা দেখলে শিশুরা ভয়ে জড়োসড় হয়ে যায়। যে কারণে পড়তে চায় না। বর্তমানে কোমলমতি শিশুদেরকে তাদের মানসিক বিকাশ হওয়ার আগেই বইয়ের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হ”েছ। যেখানে তিন বা চারটি বইই যথেষ্ট, সেখানে তাদেরকে বই দেয়া হ”েছ সাত/আটটি। এছাড়া শিশুদেরকে মন-মানসিকতার উপর ভিত্তি করে পড়ানো হয় না। কোমলমতি শিশুদের ভর্তি হওয়ার প্রায় সাথে সাথে-ই পরীক্ষা নেওয়া হয়। শিশুদেরকে আচার আচরণ, রীতিনীতি ও অন্যান্য মৌলিক গুণাবলি শিক্ষা দেয়া হয়না। তাদের স্কুল হবে বাড়ির মত। বাড়িতে যেমন সে খুব আনন্দবোধ করে স্কুলে ও যেন সে আনন্দ পায়, সেদিকে প্রত্যেকের খেয়াল রাখতে হবে। এছাড়া আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা পিতামাতার মতামত শিশুদের উপর চাপানো হয়। তাদের ই”ছার কোন মূল্য দেয়া হয়না। কিন্ত এটা মারাত্মক ভুল। কারন সব ধরণের মেধা সবার থাকে না। তাই অভিভাবকদের ই”ছা কখনোই শিশুদের উপর গচিয়ে দেয়া ঠিক নয়। কৃষিবিদ ও গবেষক ইবাদ আলীর শিক্ষাপদ্ধতির কিছু মৌলিক নিয়ম হল
১. মানুষ জীবনের প্রথমে পর্যায়ে ব¯‘র নাম শেখে বর্ণের নাম নয়
২. বইয়ের বামপাশে থাকবে ব¯‘র ছবি আর ডানপাশে থাকবে বর্ণ
৩. প্রত্যেক মানুষের মধ্যে কিছু সফ্টওয়্যার আছে আর এগলো বাহ্যিক নিয়ামক দ্বারা প্রভাবিত হয়
৪. শিশুদের বই একজন শিক্ষক এর ভুমিকা পালন করতে পারে
বই রচনার আটটি সাধারণ নিয়ম
এমন একটি শব্দ বাছাই করতে হবে যার প্রথমে, যে বর্ণটি শিশুকে চেনাতে চা”িছ শুধুমাত্র সেই বর্ণটি শব্দের প্রথমে থাকবে।
বর্ণটির সাথে কোন আ -কার,এ-কার অর্থাৎ কোন অলংকার যোগ করা যাবে না।
শব্দটির একটি ছবি থাকতে হবে এবং সেই ছবিটি আবার সবাইকে চিনতে হবে।
বই এর প্রথমেই শব্দটির ছবি থাকতে হবে ।
বর্ণটি দ্বারা যে বাক্য শিশুকে শেখাতে চা”িছ সেই বাক্যটি অবশ্যই নীতি কথা মুলক, বিজ্ঞান ভিত্তিক ও ব্যবহারিক হতে হবে।
বইটি হতে হবে সকল ধর্মের, সকল বর্ণের সকল শ্রেণীর লোকের জন্য উপযোগী।
বাক্যটি যে বিষয়ে হবে সেই বিষয়ের একটি ছবি থাকা লাগবে ।
ছবি ও বর্ণ পাশাপাশি বসবে এবং আগে ছবি ,তারপর বর্ণ থাকবে।
ই”ছা এভাবে ধীরে ধীরে তিনি দেশের সকল অভিভাবকদের একদিন সচেতন করে তুলতে পারবেন। তাহলেই শিক্ষা নিয়ে তার যে স্বপ্ন তা পূরণ হবে।
Leave a Reply